নিখোঁজের একদিন পর মালিবাগে পাওয়া গেলো ১৩ বয়সী মাদরাসার ছাত্র হাফিজ আবরারকে
হাফিজ আবরারের চাচা মারুফ তাক্বী আজ ২ নভেম্বর মঙ্গলবার তার ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আবরার নিখোঁজ হওয়ার সকল রহস্য জানান। তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন,
১. প্রতিদিনের স্বাভাবিক রুটিন অনুযায়ী রাতের খাবার খেতে আসে আবরার । কবুতরের ভ্যাক্সিনেশন করে। সময় শেষ দিকে, দ্রুত মাদরাসায় ফিরতে হবে। দুধ না খেয়েই চলে যায় মাদরাসার দিক। বাসা থেকে বের হতেই শুনে কেউ তাকে ডাকছে। গলির দিক ফিরতে গেলে তার বাবা চলে আসে, তিনি কেউ ডাকেনি বলে ফিরিয়ে দেয় মাদরাসায়।
আবারও ডাক শুনে। পাশে থাকা ছোট ভাই বলে-" কে ডাকে? আমি তো শুনি না। তোরে জিন ডাকে? চল।" চলতে চলতে মাদরাসায় চলে যায়৷ আবারও ডাক শুনে ছোটভাই মুয়াজকে মাদরাসায় উঠিয়ে ফিরে আসে।
দেখতে পায় পাঞ্জাবি পরিহিত, মাস্ক মুখে বেটে দেহের এক হুজুর তাকে ডাকছে। জামিয়া কারিমিয়া রামপুর মাদরাসা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে করতে নিয়ে যায় মূল রাস্তার দিক। বলা চলে, গল্প জমিয়ে ফেলে তার সাথে৷ কাঁধে হাত দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল দেখে আর ফিরে আসতে পারছিলো না। যেতে যেতে মোল্লা টাওয়ার পৌঁছালে কী হয় সে জানেনা।
২.
এদিকে পরিবারের সবাই ভালোভাবে খুঁজে লাগে। বিভিন্ন পরিচিতমুখ মারফত প্রচার হয়৷ সংবাদমাধ্যমেও উঠে আসে আবরারে নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ। যারদুরুন দু-রাত একদিন গিয়ে সকাল হতে একটা কল আসে। আমাদের আবরার নাকি এক্সিডেন্ট করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে আছে। এসআই পলাশ নামে রেলওয়ে প্রশাসনের কেউ কল দিচ্ছে৷
স্থানীয় কয়েক মারফত জানতে পারি, এমন নামের কেউ আসেনি এবং এই টাইপ কোন রোগী ভর্তি হয়নি। ওইলোক আমাদের লোকের সাথে দেখা করার বদলে একজনকে হুমকি দিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করিয়ে ফেলে। পরে বিষয়টা জেলা সুপারকে ইনফর্ম করে এখানেই খ্যান্ত হই। এরমধ্যে মালিবাগ থেকে কল আসে, আবরার মিলেছে।
৩.
ঘটনা হলো- দ্বিতীয় দিন সকালে সে নিজেকে আবিষ্কার করে গোছানো এক ফ্ল্যাটে। আবরারকে রুমে হাত বেঁধে ফেলে তারা অন্যরুমে খোশগল্পে মেতেছে। তখনি শুনতে পায়, পরিবারকে কল করা নিয়ে অজ্ঞাত লোকদের প্ল্যানিং চলছে।
এদিকে তার দরজা খোলা, মূল ফটকেও কোন তালা ঝুলছে না। বিষয়টা আঁচ করতে পেরে মুখ দিয়ে হাতের রশি খুলে, পায়ের বাঁধন ছুটিয়ে নেয়। ঝুলে থাকা পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
একদৌড়ে আবুল হোটেল হয়ে মূল রাস্তায় উঠে। পুলিশ ভ্যান দেখতে পেয়ে পিছন পিছন ছুটে আসে। সে ভ্যান পায় মালিবাগ মোড়ে। পুলিশকে বিস্তারিত বললে তারাই আবরারকে পাঞ্জাবি পরিয়ে শান্ত হতে বলে। তারপর বাবার নাম্বার নিয়ে কল দিয়ে বিস্তারিত জানে, বর্তমান অবস্থাও জানায়৷ মালিবাগ আসতে বলে।
৪.
পুলিশি ঝামেলা শেষ করে বাসায় এসেছে আবরার। তার গায়ে তিনটা সুঁই ঢুকানোর চিহ্ন। দু-দিন আগে মায়ের দেয়া নাশতার দশ টাকা এখনো পকেটে আছে, বহাল তবিয়তে। যে লোকের বিবরণ দিয়েছে এমন দেখতে এক লোক সপ্তাহখানেক আগেও বাসার সামনে দেখেছিল তার মা। বাহির থেকে জিজ্ঞেস করেছিল, এটা হুজুরের বাসা কিনা?
এগুলোর কিছু আগাগোড়া বুঝে আসলেও, প্যারানরমাল ডাকের বিষয়টা বুঝে আসছে না৷ একজন শুনলেও এই আওয়াজ অন্যকেউ না শোনা, অবশ্যই নরমাল না। তার উপর একই উপায়ে এটা দ্বিতীয় দফা ঘটেছে।।পূর্বে তাকে খুব দ্রুত পাওয়া গিয়েছিল। এবার তো কিডন্যাপে গড়িয়েছে। এই বিস্ময় থেকে বের হওয়া এবং রহস্য উদঘাটন করার জন্য শার্লক হোমসের প্রয়োজন। আশাকরি একদিন জানা যাবে। ইনশা-আল্লাহ।