একজন মামুনুল হক ও আমাদের আশ্চর্য নিরবতা!

 একজন মামুনুল হক ও আমাদের আশ্চর্য নিরবতা!

একজন মামুনুল হক ও আমাদের আশ্চর্য নিরবতা!

Zahid Zaman 

-----------------

১৩ সনে আল্লামা আহমাদ শফী রহ. এর ডাকে অভূতপূর্ব আন্দোলন হয়েছিল। সে সময় দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে শানে রিসালাত সম্মেলন ও ওয়াজ মাহফিলে ইশকে নবীর হৃদয়গ্রাহী জোড়ালো বক্তব্যের মাধ্যমে জনমত তৈরীর কাজটি যারা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে অগ্রে ছিলেন সেসময়ের তরুণ নেতা মাওলানা মামুনুল হক।।


 হেফাজতের ১৩ দফার নারীনীতি সংক্রান্ত ধারার উপর নাস্তিকদের অবান্তর সকল প্রশ্নের দালিলিক জবাব তিনিই তুলে ধরেছেন। মনে পরে মুহাম্মাদপুরের টাউনহল মাঠে শুধু এই ধারার উপর প্রায় দেড়ঘন্টা দাঁড়িয়ে আলোচনা করেছিলেন।। 


ঢাকা অবরোধের দিন গাবতলী পয়েন্টে আমিনবাজার ব্রীজের পূর্ব পাশে স্থানীয় আ.লিগের এমপি ও তার ক্যাডারদের প্রতিরোধে করতে চাইলে মাও. মামুনুল হকের দৃঢ় অবস্থানের কারনে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।


 যার ফলে ১৩ সালে গ্রেপ্তারের পর মিরপুরে হাস্যকর ব্যটারি চুরির মামলায় তাঁকে ফাঁসানো হয়। রিমান্ডের জন্য মিরপুরে কুখ্যাত ওসির মুখোমুখি হতে হয়।। শাপলা চত্ত্বরে তাঁর ঐতিহাসিক বক্তব্য কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল।।


পরবর্তী ৮ বছরে মামুনুল হক হয়ে উঠেন হক হক্কানিয়তের পক্ষ্যের একজন বলিষ্ঠ মুখপাত্র। যে কোন অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে আর কেউ কিছু বলুক আর না বলুক তিনি লিখনি বা বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি গর্জে উঠতেন। অন্যায়ের শিকার ব্যক্তি যেই ঘরানারই হোক না কেন তার পাশে নিঃসংকোচে তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন। 


কওমী সনদের স্বীকৃতি নিয়ে নানা জল্পনাকল্পনা শুরু হওয়ার পর যখন সবাই উদ্বিগ্ন ছিল,স্বীকৃতির পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা- পর্যালোচনা কাদা ছোড়াছুঁড়ি হচ্ছিল। সবাই যখন স্বীকৃতির হাওয়ায় পেণ্ডুলামের মতো এদিক ওদিক দুলছিল, তখন যার সুচিন্তিত লেখাগুলো পড়ে অনেকেই নিজেদের উদ্বিগ্নতা ও দোদুল্যমানতা কাটিয়ে লক্ষ্য স্থির করতে পেরেছেন, ধারণা পেয়েছেন।কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি থেকে ফিরে এসেছেন। 

সময়ের সে ক্রান্তিলগ্নে যে অভিভাবকত্বের প্রয়োজন ছিল, তরুণদের পক্ষ হয়ে সে গুরু দায়িত্ব যিনি পালন করেছিলেনন, তিনি ছিলেন সময়ের সাহসী সন্তান শায়েখ মুহাম্মাদ মামুনুল হক দা.বা.। 


অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও বক্তব্য, আলোচনা, মতিবিনিময় ব্যক্তিগত আলাপচারিতার জন্য দূর দূরান্তে অক্লান্ত সফর করেছেন অন্তরে এই ব্যথা নিয়ে, "আকাবীরদের রক্তে প্রতিষ্ঠিত কওমী মাদ্রাসা এত সহজেই বিনষ্ট হয়ে যাবে?" আগামী প্রজন্মের কাছে আমাদের কী জবাব থাকবে?... এক ইলহামী মানদন্ড তিনি জাতির সামনে উত্থাপন করেছিলেন, যা ছিল তরুনদের জন্য আলোকবর্তিকা ও মুরুব্বীদের জন্য সহায়িকা।


নারায়নগঞ্জের এক এমপি কর্তৃক আলোচিত এক বক্তাকে স্টেজে হেনস্থার প্রতিবাদে মুহাম্মাদপুরে ইত্তেফাকের মাহফিলে স্থানিয় এমপিকে সামনে রেখেই তার এই কাজের কড়া প্রতিবাদ তিনিই করেছিলেন। 


তাবলীগের সাদপন্থীদের গোমরাহী ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, কওমীর স্বার্থবিরোধি বিভিন্ন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, দেশ -ধর্ম-রাষ্ট্রবিরোধী সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগনকে সচেতন করা ও ষড়যন্ত্রকারীদের অন্তরে কাঁপন ধরিয়ে তাদের পিছু হটতে বাধ্য করায় তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।।


মূর্তি ও শিরকি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে গর্জে উঠে কিছু লোক যখন পরিস্থিতির ভয়াবহতা টের পেয়ে নিরবে সটকে পরেছিল তখন তাওহীদের পক্ষ্যে নিজের জীবনকে বাজি রেখে একাই ময়দানে লড়ে গেছেন। আসীন হয়েছিলেন মুরুব্বি ও দেশের তৌহিদী জনতার অন্তরের আস্থা ও ভরসার সিংহাসনে।। চক্ষুশুলে পরিণত হয়েছিলেন ক্ষমতাসীন ও নাস্তিকপাড়ার।। কিন্তু দমে যাননি কখনো।। 


এভাবে ফিরিস্তি দিতে গেলে তা শেষ হবার নয়।। অন্যায়ের সামনে মাথানত না করার ক্ষেত্রে যুগের আবু বকর ও বাতিলের অন্তরে কাঁপন ধরিয়ে দিতে যুগের ওমরের ভূমিকা তিনি সর্বক্ষেত্রে রেখেছিলেন।। 


তিনি ছিলেন একটি মহীরুহের ন্যায় ; সকল ঝড়ঝাপ্টা নিজের মাথায় টেনে নিয়ে আশ্রয় দিয়ে গিয়েছেন সকলকে। তাঁর ছায়ায় থেকে অনেক চারাগাছ বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। বাতিলের বিরুদ্ধে নানা ভূমিকা রেখেছে। তিনি কী অমূল্য সম্পদ ছিলেন তা আজ সবাই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।। তাঁর অনুপস্থিতিতে সব যেন আজ তাসের ঘরের মতো ভেংগে পড়েছে।। 


কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো আজ আমরা ভুলে গিয়েছি তাঁকে। জালিমের বন্দীশালায় কেটে গিয়েছে তাঁর ছ' ছটি মাস। শত শত ছাত্র বঞ্চিত হচ্ছে তাঁর বুখারির দরস থেকে। সন্তানেরা তাঁর স্নেহ-শাসন থেকে। জনগন তাঁর ধর্মীয় নির্দেশনা থেকে।


 নিজের আখের গোছাতে যেন ভুলে গিয়েছি নিজের বিপদের বন্ধুকে।। আমারও যে কিছু করার আছে সে অনুভূতিও আমরা হারিয়ে ফেলেছি। 


যে মানুষটি নিজের জীবনের বাজি রেখে আমাদের পাশে দাঁড়ালেন তার জন্য কি আমার কিছুই করার নেই? এই ভয়ংকর নিরবতা কিসের ইংগিত দিচ্ছে? জবাব আছে কি আমাদের কাছে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন